সংজ্ঞা - গ্রিক দার্শনিক প্লেটো ও অ্যারিস্টোটল মানুষ ও সমাজের মঙ্গলের কথা লিখে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। আধুনিক অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পণ্ডিতগণ এর সংজ্ঞা এবং প্রাকৃতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। জাতীয় স্বার্থের সংজ্ঞা যারা দিয়েছেন তাদের মোটামোটি দুটি গোষ্ঠীতে ভাগ করা হয়।
সংজ্ঞার বিতর্ক - এক গোষ্ঠীর মত হল, 'জাতীয় স্বার্থ একটি বৈজ্ঞানিক ধারণা' এই চিন্তাধারার প্রধান রূপকার হলেন প্লেটো। তিনি তাঁর রিপাবলিক গ্রন্থের বলেছেন যে, "দার্শনিক, রাজা ও অভিভাবক শ্রেণী, যাকে নগর রাষ্ট্রের পক্ষে কল্যাণকর মনে করবেন সেটাই হবে জাতীয় স্বার্থ।" দার্শনিক, রাজা ও অভিভাবক শ্রেণি কখনোই দুর্নীতি পরায়ন নয়। সমাজের জন্য কোনটা মঙ্গল জনক তা তারা ভাল বোঝেন। অপর গোষ্ঠীর মতে এটি একটি কৌশল বা শিল্প। অ্যারিস্টোটল এই মতে সমর্থক। তিনি মনে করতেন যে, "মানুষের কল্যাণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হবে"। অ্যারিস্টোটলের মতে যৌথ স্বার্থ কি?, সমাজের স্বার্থ কি, তা জনগন নিজেরা মিলিত হয়ে স্থির করবে
জনমত - জাতীয় স্বার্থ একটি 'আর্ট' বলেছেন অ্যারিস্টোটল তার মতে, জনগণের স্বার্থ কী? এবং কেমন ভাবে তা অর্জিত হবে তা জনগণই স্থির করবে। সুতরাং জনমতই জাতীয় স্বার্থ রক্ষার অন্যতম উপায়। জোসেফ ফ্রাঙ্কেল এর মতে জাতীয় নীতি মানের বিষয়টিও জাতীয় স্বার্থ নির্ধারণের উপায়।
নীতি ও মূল্যবোধ - প্রতিটি জাতি কতগুলি নীতি বা মূল্যবোধ অনুসরণ করে চলতে চায়। উদার মনোভাব এবং বিশ্ব মানবতাবোধ জাতীয় স্বার্থ রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফ্রাঙ্কেল বলেছেন যে, "জাতীয় স্বার্থকে যদি উদারনীতিক অর্থে দেখা যায় তাহলে, জাতিতে জাতিতে বিরোধ দেখা দেয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায় তাই ব্যাপক অর্থে জাতীয় স্বার্থকে উদারনীতিবাদ বলা যেতে পারে" ।
কূটনীতি কাজ - H.J মরগ্যান থাউ, F সুম্যান প্রমুখ বাস্তববাদী রাজনীতিবিদরা মনে করেন যে, কূটনৈতিক কার্যাবলী জাতীয় স্বার্থের দ্বারা প্রভাবিত হয়। জাতীয় স্বার্থ দুটি মহান আদর্শের সঙ্গে যুক্ত তা হল, সাধারন কল্যাণ এবং যথাযথ প্রক্রিয়া। এই দুটোই আমেরিকার সংবিধানের মূল স্তম্ভ।
বস্তুগত উপাদান - মরগ্যান থাউ এর মতে জাতীয় স্বার্থের আরো উপাদান আছে তা হলো, বস্তুগত, রাজনৈতিক, সংস্কৃতিক। বস্তুগত প্রক্রিয়া অর্থ সংহতি। এই সংহতি রক্ষার জন্য প্রয়োজন হয় সামাজিক অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোকে সযত্নে রক্ষা করা। একটি জাতীয় স্বার্থ টিকে থাকার জন্য এই বিষয়গুলি খুব দরকার। জনমত জাতীয় স্বার্থের আমূল্য সম্পদ রাষ্ট্রের বিদেশিনীতি জাতীয় স্বার্থের পরিপথি হলে জনগণ আন্দোলনে পথে পা বাড়ায়। টিকে থাকার তাগিদে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পাবে। বিদেশীনীতির রূপকাররা একে উপেক্ষা করতে পারে না
মূল্যায়ন - পরিশেষে বলা যেতে পারে যে, জাতীয় স্বার্থের ধারণ ব্যাপকতা। এই উপাদান অনেক। শুধুমাত্র বৈষায়িক দৃষ্টি দিয়ে বিচার করলে এর মূল্যায়ন করা যায় না। অনেক উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত 'জাতীয় স্বার্থ' ।