Subscribe Us

সার্ক গঠনের সিদ্ধান্ত কেন নিয়েছিল ।। এর উদ্দেশে বা লক্ষ্য কী ছিল এবং এর সমস্যা কি ছিল ।। উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন 2021 বড় প্রশ্ন

  সার্ক:- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পর্বে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ভৌগোলিক এলাকাভুক্ত দেশগুলি নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত সহযোগিতার কারণে আঞ্চলিক সংগঠন গড়ে তুলেছিল। এগুলির মধ্যে অন্যতম হলো সার্ক অর্থাৎ South Asian Association For Regional Co-operation।

বর্তমানে এই সার্কের সদস্য রাষ্ট্রগুলো হলো ভারত বাংলাদেশ নেপাল ভুটান শ্রীলংকা মালদ্বীপ এবং আফগানিস্তান যদিও আফগানিস্তান পরে যুক্ত হয়েছে। এই সার্ক গঠিত হয় 1985 খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে।

প্রেক্ষাপট 1985 খ্রিষ্টাব্দের 8 ডিসেম্বর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় সার্ক প্রতিষ্ঠিত হয় সার্ক প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট ছিল নিম্নরূপ:-


1. জিয়াউর রহমানের শ্রীলঙ্কা সফর:-  দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে এ কোন আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়ে সর্বপ্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান 1979 খ্রিস্টাব্দের শ্রীলঙ্কা সফর কালে প্রস্তাব দেন।

2. সার্ক গঠনের সিদ্ধান্ত:-  এই সময় জিয়াউর রহমানের সক্রিয় উদ্যোগের জন্যই সার্ক সদস্য ভুক্ত দেশ গুলির বিদেশ মন্ত্রীগন অনুপ্রাণিত হন। এবং পরবর্তী কয়েক বছর পরস্পর একাধিক সম্মেলনে মিলিত হন। অবশেষে 1983 খ্রিস্টাব্দে দিল্লি সম্মেলনে সার্ক সদস্য ভুক্ত দেশগুলো সমবেত হয়ে সার্ক গঠনের সিদ্ধান্ত নেন।

3. সার্ক এর প্রতিষ্ঠা:- জিয়াউর রহমানের উদ্যোগ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে 1985 খ্রিস্টাব্দে 7-8 ডিসেম্বরে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশগুলোকে নিয়ে এশার গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।

4. লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য:- দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার বিভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে সেগুলি হল:-

1. উন্নয়ন:- সদস্য রাষ্ট্রগুলির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সামাজিক অগ্রগতি এবং সমাজের উন্নয়ন ঘটানো।

2. জনকল্যাণ:- দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জনগণের কল্যাণ সাধন এবং তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটানো।

3. আত্মনির্ভরতা:- প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের স্বাধীনতা রক্ষা এবং যৌথ ও আত্মনির্ভরতা গড়ে তোলা।

4. নিরাপত্তা:- দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও সন্ত্রাসবাদকে প্রতিরোধ করা।

5. বোঝাপড়া:- সদস্য রাষ্ট্র গুলোর মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস বোঝাপড়া এবং সংবেদনশীলতার পরিবেশ তৈরি করা।

6. সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান:- সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান ও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সংস্কৃতির অগ্রগতি ঘটনো।

7. শান্তিপূর্ণ সহবস্থান:- সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখা।


সমস্যা:- বিভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে সার্কের প্রতিষ্ঠিত হলেও বহু ক্ষেত্রেই সার্ক তার লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে যেমন:-


1. রাজনৈতিক অস্থিরতা:- দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতা সার্কের সাফল্যের ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। ভারত-পাক বিরোধ এ বিষয়ে একটি বড় বাধা পারস্পরিক অবিশ্বাস, আঞ্চলিক ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা, সামরিক প্রতিযোগিতা, সীমান্ত সংঘর্ষ প্রভৃতি ঘটনার প্রভাব সার্ক এর অভ্যন্তরে যথেষ্ট বাধার সৃষ্টি করেছে।

2. তামিল জঙ্গি সমস্যা:- শ্রীলংকার তামিল জঙ্গিদের সন্ত্রাসবাদি কার্যকলাপের ঘটনায় শ্রীলঙ্কা সন্দেহ করে যে জঙ্গি কার্যকলাপের প্রতি ভারতের মধ্যে রয়েছে এই ঘটনায় ভারত শ্রীলংকা সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

3. ভারসাম্যহীনতা:- ক্ষুদ্র ও বৃহৎ রাষ্ট্রগুলির মধ্যে শক্তি ও আর্থিক ব্যবধান এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অসম বন্টন সার্কের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে শক্তির ভারসাম্য নষ্ট করেছে। দুর্বল রাষ্ট্রগুলি ভারতের তুলনায় খুবই অনগ্রসর হওয়ায় নানাভাবে সার্কের অগ্রগতি ব্যহত হচ্ছে।

4. মতভেদ:- সার্ক এর কর্মপদ্ধতি ও কার্যকলাপ সম্পর্কে বিভিন্ন সদর রাষ্ট্র' মধ্যে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। এই মতভেদ সার্কের সমস্যা যথেষ্ট বৃদ্ধি করেছে।

5. সহযোগিতার অভাব:- সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অনেক সময় সহযোগিতার অভাবের ফলে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না এবং দেশগুলোর উন্নয়ন ও অগ্রগতি ব্যহত হচ্ছে।

এরই পাশাপাশি ভারত সম্পর্কে সন্দেহ, চীনের সঙ্গে সদস্য রাষ্ট্রের আঁতাত, ভারত-পাক সম্পর্কের অবনতি, সন্ত্রাসবাদের কার্যকলাপ প্রভৃতি সার্কের প্রধান সমস্যা হিসেবে প্রতিপন্ন।

সাফল্য সমস্যা থাকলেও সার্কের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সাফল্যের দিক রয়েছে যথা:-
1. সার্কের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক আদান প্রদান ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে।

2. সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে যথেষ্ট সাফল্য এসেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রগতি খুবই প্রশংসার যোগ্য।

3. দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের বিশেষ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে।

4. নেপালের কাঠমান্ডুতে সার্ক এর স্থায়ী সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করে সার্কের কর্মসূচি বাস্তবায়িত করার সক্রিয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

5. খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করেছে।

6. শিশু কন্যাদের কল্যাণ এর উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

মূল্যায়ন:- এই ভাবে দেখা যায় যে বর্তমানে সার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছে যদিও সার্ক প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি বজায় রেখে উন্নয়ন সাধন করা; সেই উদ্দেশ্যে সার্ক অনেকাংশে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে।