প্রশ্ন:-
ভারতীয় পার্লামেন্টের আইন পাশের পদ্ধতি ব্যাখ্যা করো।
অথবা
ভারতের কেন্দ্রীয় আইন প্রণয়নের পদ্ধতি গুলি ব্যাখ্যা করো।
ভূমিকা →ভারতের পার্লামেন্ট বিল উত্থাপন থেকে শুরু করে রাস্ট্রপতির অনুমোদন লাভ করে আইনে পরিণত হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করতে হয়। ভারতীয় সংবিধানে 107-122 ধারায় পার্লামেন্টের বিল পাসের স্তর গুলি উল্লেখ আছে। এখানে উল্লেখ্য যে, অর্থ বিল কেবল লোকসভাতেই উত্থাপিত হতে পারে।
ক্যাবিনেট চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়→ সরকারি বিল কোন কোন বিষয়ে উত্থাপন করা হবে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন ক্যাবিনেট। বিভিন্ন দপ্তরের ভার প্রাপ্ত মন্ত্রী গণ আইন প্রণয়নের জন্য প্রস্তাব পেশ করেন। বিলের সমস্ত দিক বিচার বিবেচনা করে ক্যাবিনেট বা মন্ত্রিসভা প্রস্তাবিত বিল গুল সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক এ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আইনমন্ত্রক বিলটির খসড়া প্রনয়ণ করে। অর্থবিল ছাড়া অন্যান্য বিল কেন্দ্রীয় আইনসভার যে কোনো কক্ষে উত্থাপন করা যায়
বিল পাসের স্তর
(1) বিলের প্রথম পাঠ→ এই পর্যায়ে বিলের উত্থাপক বিলটির নামকরণ সহ বিল উত্থাপন করেন। তিনি বিলের উদ্দেশ্য ও প্রকৃতি ব্যাখ্যা করেন। এই পর্বে বিলটির বিষয়-বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয় না। নিয়ম অনুসারে বিলটিকে সরকারি গেজটে প্রকাশিত হয়। এর নাম বিলের প্রথম পাঠ।
(2) বিলের দ্বিতীয় পাঠ→ বিলের দ্বিতীয় পাঠ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পর্যায়ে বিলটিকে নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক হয়। এই পর্বে উত্থাপক বিলের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলতে পারেন-
(ক) বিলটি আইন সভায় সরাসরি বিবেচিত হোক,
(খ) বিলটিকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হোক,
(গ) জনমত নির্ধারণের জন্য বিলটিকে প্রচার করা হোক।
এই পর্যায়ে বিলটির সংশোধন ও করা হয়। বিলটিকে যখন বিচার বিবেচনার জন্য সিলেক্ট কমিটি বা যুক্ত কমিটিতে পাঠানো হয় তখন তাকে বলে বিলটির কমেটি পর্যায়। এই কমিটি বিলটির ধারা, উপধারা নিয়ে বিস্তারিত বিচার বিশ্লেষণ করে। কমেটি বিল সম্পর্কে যাবতীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করে। প্রচলিত কোনো আইনের সঙ্গে আলোচ্য বিলটির কোনো বিরোধ আছে কিনা, কমেটিকে তা বিচার বিবেচনা করে দেখতে হয়। তারপর কমেটি তার সুপারিশ সহ একটি রিপোর্ট তৈরি করেন। বিলের উত্থাপক বিলটিকে সভায় পুনরায় পেশ করে। সভা বিলটিকে বিচার বিশ্লেষণ করে। সভার যে কোনো সদস্য বিলটির প্রতিটি ধারার বিচার বিবেচনা এবং ভোট গ্রহণ শেষ হলে বিলটির দ্বিতীয় পাঠ সমাপ্ত হয়।
(3) বিলের তৃতীয় পাঠ→ নির্দিষ্ট দিনে বিলের তৃতীয় পাঠ আরম্ভ হয়। এই পর্যায়ে বিলটিকে সামগ্রিকভাবে বিচার বিবেচনা করতে হয়। এই পর্যায়ে বিলের ধারা-উপধারা নিয়ে খুঁটিনাটি আলোচনা হয় না, তবে শব্দগত সংশোধনের প্রস্তাব করা যায়। গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন হয় না। বিলটি সভায় ভোটাধিকার গৃহীত হবার পর লোকসভার স্পিকার সেই মর্মে একটি প্রমাণপত্র দেন। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে বিলটি পাশ হবার পর বিলটিকে উচ্চকক্ষে অর্থাৎ রাজ্যসভায় পাঠানো হয়। উচ্চকক্ষে বিলটি গৃহীত হলে তখন বিলটিকে রাষ্ট্রপতি সম্পত্তির জন্য রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়। রাষ্ট্রপতি বিলে স্বাক্ষর করলে বিলটি আইনে পরিণত হয়। তিনি সম্মতি না দিলে বিলটি বাতিল হয়ে যায়। তিনি পুনর বিবেচনার জন্য বিলটিকে পার্লামেন্ট ফেরত পাঠাতে পারেন।
উপসংহার→ বিল পাসের ক্ষেত্রে উভয়পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হতে পারে। যদি এরূপ হয় তবে অচল অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। এই অচল অবস্থা দূর করার জন্য রাষ্ট্রপতি উপায় কক্ষের যুগ্ম অধিবেশন আহ্বান করেন। এই যুগ্ম অধিবেশনে উপস্থিত ও ভোট দান কারি সদস্যদের অধিকাংশের ভোটে বিল সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ।