Subscribe Us

পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধের তুলনামূলক আলোচনা করো।। উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস 【2022】 বড় প্রশ্ন

 পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধের তুলনামূলক আলোচনা হলো:-

ভূমিকা→ ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে ২৩ শে জুন ভাগীরথী নদীর তীরে বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাথে লর্ড ক্লাইভের নেতৃত্বে ইংরেজদের যে যুদ্ধ হয়েছিল তা ভারতের ইতিহাসে পলাশীর যুদ্ধ নামে পরিচিত। এই যুদ্ধের পরাজয়ের ফলে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য প্রায় ২০০ বছর অস্তবিত হয়। এই যুদ্ধের ফলাফল ছিল অত্যন্ত সুদূর প্রসারী এই যুদ্ধের ফলাফল নিম্নরূপ।

খণ্ডযুদ্ধ→ পলাশীর যুদ্ধের হতাহতের সংখ্যা ও ব্যাপকতার  দিক দিয়ে এটি একটি ছিল খন্ডযুদ্ধ মাত্র। এই যুদ্ধে নবাবের পক্ষে ৫০০ জন ও ইংরেজদের পক্ষে মাত্র ২২ জন সেনার মৃত্যু হয়। ঐতিহাসিক ন্যালেসন বলেছেন যে "পলাশী যদিও নির্ণয়ক যুদ্ধ,তথাকি কখনো বৃহৎ যুদ্ধরূপে বিবেচিত হতে পারে না"।

স্বাধীন নবাবী শাসনের অবসান→ পলাশীর যুদ্ধে হেরে গিয়ে ভারতে সর্বাধিক অঞ্চল বিদেশীরা দখল করে নেয় এবং সেখানে ইংরেজরা প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী হয়। ইংরেজরা নিজের হাতের পুতুল হিসেবে মীরজাফরকে সিংহাসনে বসায়।নিজেরা সিংহাসনের পশ্চাদে প্রকৃত শক্তিতে পরিণত হয়।

কোম্পানির সাম্রাজ্য বিস্তার→ পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভ করে ইংরেজ কোম্পানি ভারতে নিজেদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। এই যুদ্ধের পর থেকে বাংলার সম্পদ ব্যবহার করে ইংরেজরা ভারতে অন্যান্য অঞ্চলে ব্রিটিশ শাসনের প্রসার ঘটায়।

পলাশীর লুণ্ঠন→  পলাশীর যুদ্ধের পর বাংলার নতুন নবাব ইংরেজ কোম্পানি ও কর্মচারীদের প্রচুর অর্থ পুরস্কার দিতে বাধ্য হয়। যুদ্ধের পরবর্তীকালে কোম্পানি ছলে-বলে-কৌশলে বাংলা থেকে প্রচুর অর্থ সংগ্রহ করে তা নিজেদের দেশে পাঠিয়ে দেয়। এর ফলে বাংলার অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ে যা পলাশীর লুণ্ঠন পরিচিত।

নতুন যুগের সূচনা→   পলাশীর যুদ্ধের পর ইংরেজরা এদেশে সমাজ-সভ্যতায় নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা করায় প্রাশ্চাত্য শিক্ষা ও ভাবধারার অনুপ্রবেশ ঘটে। নবজাগরণের ফলে মধ্যযুগের অবসান ঘটে। ও আধুনিক যুগের সূচনা ঘটে।

বক্সার যুদ্ধের ফলাফল

১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে ৮/২২ অক্টোবর মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম,অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা,এবং বাংলার নবাব মীর কাসিম এর মিলিত বাহিনীর সঙ্গে বক্সসার প্রান্তরে যে  যুদ্ধ সংঘটিত হয় তা বক্সার যুদ্ধ নামে পরিচিত। ভারতের ইতিহাসে বক্সারের যুদ্ধ ছিল এক অন্যতম নির্ণয়ক যুদ্ধ এর ফলাফল নিম্নরূপ।

(১) ব্রিটিশ প্রভুত্ব→  পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভ করে বাংলা তথা ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সম্ভাবনা দেখা দেয় তা বক্সার যুদ্ধে জয় লাভ করে তাকে বাস্তবায়িত করে।

(২) ভারতীয় শাসকদের অযোগ্যতা→ পলাশীর যুদ্ধে শুধুমাত্র বাংলার নবাব পরাজিত হয়েছিলেন। কিন্তু বক্সারের যুদ্ধে বাংলার নবাব,অযোধ্যার নবাব,ও মোগল সম্রাট একসাথে পরাজিত হন। এই পরাজয় বাংলা তথা ভারতের শাসক অযোগ্যতা প্রমাণ করে।

(৩) নবাবের ক্ষমতা হ্রাস→ বক্সার যুদ্ধের পরে অযোধ্যাও বাংলার নবাবের ক্ষমতা কোম্পানি চূড়ান্ত হ্রাস করে। অযোধ্যার নবাব কোম্পানি নিয়ন্ত্রণাধীন  হয়ে পড়ে। বাংলা নবাব কোম্পানির ভিত্তিভোগি নবাবে পরিণত হয়।

(৪) কোম্পানির দেওয়ানি লাভ→ বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের পর ইংরেজরা বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বাংলা,বিহার,উড়িষ্যা দেওয়ানি লাভ করে। ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে এর ফলে কোম্পানি সেখানে ব্যাবসা ও বানিজ্য রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব পান।

(৫) শিল্প বাণিজ্য এর উপর কোম্পানি কৃতিত্ব→ বক্সারের যুদ্ধের পর বাংলার কুটির শিল্প ও বাঙালির ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস শাসন করে। ব্রিটিশরা একচেটিয়াভাবে শিল্প-বাণিজ্যে উপর নিজের কৃতিত্ব প্রতিষ্ঠা করে।

উপসংহার→ পরিশেষে বলা যায় যে, পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধ ছিল ভারতের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ঐতিহাসিক বিপান চন্দ্রের মতে "বক্সারের যুদ্ধ ভারতের ইতিহাসে যুগান্তকারী তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা" পলাশী যুদ্ধের জয়ের পর ব্রিটিশ রাজত্বের যে ভিত্তিপ্রস্তর গড়ে উঠেছিল বক্সারের যুদ্ধ তা সুদূর হয়েছিল।