→জাতীয় যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী এবং রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান্য প্রতিষ্ঠিত। ভারতের সংবিধানে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা নেই। সংসদীয় গণতন্ত্রে রাজ্যপাল হলেন নিয়মতান্ত্রিক প্রধান। বাস্তবে প্রশাসনিক দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রী ও তার মন্ত্রিসভার হাতে ন্যস্ত। মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে জড়িত। যেমন-
ক্ষমতা
রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী→ রাজ্যের শাসনকার্যে রাজ্যপাল কে সাহায্য করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি মন্ত্রীসভা থাকে। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালের প্রধান পরামর্শদাতা। তিনি রাজ্যপাল প্রশাসনের যোগসুত্র। মন্ত্রীসভার সিদ্ধান্ত তিনি রাজ্যপালকে জানান। রাজ্যপাল নিয়মতান্ত্রিক প্রধান হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শেই কাজ করেন। আইন সভার অধিবেশন আহ্বান বা আইন সভা ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ তিনি রাজ্যপালের কাছে করে থাকেন।
মুখ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা→ মন্ত্রিসভার মুখ্যমন্ত্রীর শীর্ষে। তিনি মন্ত্রিসভার নেতা। মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছা অনুসারে রাজ্যপাল মন্ত্রীদের মধ্যে দপ্তর বন্টন করেন। তিনি যে কোন মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে পারেন, অথবা রাজ্যপালকে দিয়ে পদচ্যুত করতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ অর্থমন্ত্রী সভার পতন। তাকে কেন্দ্র করে মন্ত্রিসভার উত্থান পতন ঘটে। তাকে বলা হয় মন্ত্রিসভার মধ্যমনি।
মুখ্যমন্ত্রী ও বিধান সভা→ তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা। রাজ্যপালের মাধ্যমে তিনি বিধানসভার অধিবেশন আহ্বান করতে অথবা স্থগিত রাখতে পারেন। তিনি রাজ্যপালের কাছে বিধানসভা ভেঙে দেবার সুপারিশ করতে পারেন। বিধানসভায় তিনি সরকারের নীতি ব্যাখ্যা করেন, বিরোধীদের প্রশ্নের জবাব দেন, মুখ্যমন্ত্রী দের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের অভিযোগও জবাব দেন। তিনি সরকার এবং বিরোধী দলের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করেন।
সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা মুখ্যমন্ত্রী→ মুখ্যমন্ত্রী দলের নেতা। তার ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদার উপর দলের ভাবমূর্তি নির্ভরশীল। দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাবহার জীবনযাত্রা নির্বাচনে দলের জয়ে সাহায্য করে। তার ব্যাপক পরিচিত ও জনপ্রিয়তা দলের ভাবমূর্তি বিকাশের ক্ষেত্রে সাহায্য করে।
জনগণের নেতা→ মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের প্রকৃত শাসক। তিনি জনগনের আশা-আকাঙ্খার প্রতীক। রাজ্যসরকার বলতে জনগণ মুখ্যমন্ত্রীকে বোঝেন। মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিত্ব ও ভাবমূর্তি দেখায় রাজ্যের জনগণ সাধারণ নির্বাচনে আরও বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে।
পদমর্যাদা
দলগত সংহতি→ মুখ্যমন্ত্রীর পদমর্যাদা নির্ভরশীল করে তার দলের সাহায্য ও সংঘতির উপর বিধানসভার ভেতরে ও বাইরে দলের সমর্থনের ব্যাপারে নিশ্চয়তা থাকলে। মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব বৃদ্ধি পায়। আবার দলের মধ্যে যদি বিশৃঙ্খলা দেখা যায় বা গোষ্ঠী দণ্ড থাকে তাহলে মুখ্যমন্ত্রী অসুবিধায় পড়ে। ফলে প্রশাসনের মনোনীত হতে পারেন না ।
রাজ্যপালের সঙ্গে সম্পর্ক→ রাজ্যপালের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টিও মুখ্যমন্ত্রী পদমর্যাদা কে চিহ্নিত করে। রাজ্যপালের সঙ্গে সু-সম্পর্ক গড়ে উঠলে রাজ্য প্রশাসনে তিনি আরোও ভালো ভাবে দৃষ্টি দিতে পারেন।
মুখ্যমন্ত্রীর অভিঞ্জতা ও ব্যক্তিত্ব→ মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিত্ব, অভিজ্ঞ ও যোগ্যতার উপর মর্যাদা অনেকাংশে নির্ভরশীল। পদ অধিকারী যদি যোগ্য ও অভিজ্ঞ হন তাহলে তিনি যে ব্যাপক ক্ষমতা ও মর্যাদার অধিকারী হবেন সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ।
জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী→ কোয়ালি বা জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী অনেক কম ক্ষমতা ও মর্যাদা ভোগ করেন। সবসময় দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও বিতর্কের মাধ্যমে তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা আলোচনা করতে গিয়ে অধ্যাপক জোহারি মুখ্যমন্ত্রীদের তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করেছেন।
(১) কেন্দ্র ক্ষমতাশীল দলে একদলীয় মুখ্যমন্ত্রী।
(২) কেন্দ্র ক্ষমতাশীল নয় এমন কোনো দলের একদলীয় মুখ্যমন্ত্রী
(৩) কোয়ালিশন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রথম শ্রেণীর মুখ্যমন্ত্রীগন অনেক বেশি মর্যাদার অধিকারী।