Subscribe Us

ভারতের পার্লামেন্টের গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা করো - অথবা - ভারতীয় সংসদের কার্যবলি বিশ্লেষণ করো ।। উচ্চমাধ্যমিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান 2021 বড় প্রশ্ন।।ভারতের আইন বিভাগ

 ভারতের সংসদীয় শাসন ব্যাবস্থায় ইংল্যান্ডের মডেল অনুসরণ করা হয়েছে। ইংল্যান্ডের পার্লামেন্ট চরম সার্বভৌম্ম ক্ষমতার অধিকারী। ভারতের সংসদ ইংল্যান্ডের সংসদের মতোই ক্ষমতার অধিকারী, এক কথায় বলা যেতে পারে যে, ইংল্যান্ডের সংসদের প্রতিরূপ হলো ভারতের পার্লামেন্টের।

গঠন→ আমাদের পার্লামেন্ট লোকসভা, রাজ্যসভার এবং রাষ্ট্রপতি কে নিয়ে গঠিত। ভারতের লোকসভার সদস্য সংখ্যা 545 জন। ইংল্যান্ডের অনুকরণে ভারতের পার্লামেন্ট সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পূর্ণ। লোকসভা গঠিত হয় জনগণের দারা প্রত্যক্ষ ভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে। লোকসভার কার্যকাল পাঁচ বছর। রাষ্ট্রপতি প্রয়োজনে লোকসভা ভেঙে দিতে পারেন। লোকসভার অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার।

কার্যাবলী→ ভারতের পার্লামেন্টের ক্ষমতা বিস্তৃত। সংবিধানের 75 (3), 265, 266 প্রভৃতি ধারায় পার্লামেন্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলী বর্ণিত হয়েছে। পার্লামেন্টের কার্যাবলী নিয়ে নিম্ন ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়।

শাসন ক্ষমতা→ প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা রাষ্ট্রপতির সুপারিশ ক্রমে নিযুক্ত হন। মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষেত্রে লোকসভার প্রধান্য প্রতিষ্ঠিত। শাসন সংক্রান্ত সমস্ত ক্ষমতা লোকসভার হাতে এবং প্রধানমন্ত্রী তার চালিকা শক্তি।

আইনি ক্ষমতা→ আইন প্রনয়ণ পার্লামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ কাজ ও দায়িত্ব। আমাদের সংবিধানে তিনটি তালিকা রয়েছে- (১)কেন্দ্র তালিকা (২) রাজ্য তালিকা (৩) যুগ্ম তালিকা। যুগ্ম তালিকা বিষয়েও কেন্দ্র আইন প্রনয়ণ করে। যে কোনো বিল পাশের ক্ষেত্রে পার্লামেন্টের উভয় পক্ষ সমান ক্ষমতাশীল। তবে অর্থ বিলের ক্ষেত্রে লোকসভায় বেশি ক্ষমতা ভোগ করে কারণ অর্থবিল কে একমাত্র লোক সভায় উত্থাপন করা যায়।

অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা→ 265 ও 266 ধারায় বলা হয়েছে- ভারতের সংবিধান অনুসারে কর ধার্য, কর সংগ্রহ ও ব্যয় নিরবাহ পার্লামেন্টের আইন ছাড়া করা যাবে না। অর্থ সংক্রান্ত যাবতীয় ক্ষমতা লোকসভার। অর্থবিলের ব্যাপারে রাজ্যসভার কোনো ক্ষমতা নেই। লোকসভায় গৃহীত অর্থবিলকে রাজ্যসভা সংশোধন বা বাতিল করতে পারে না, কেবল সর্বাধিক 14 দিন আটকে রাখতে পারে।

বিচার ক্ষমতা→ লোকসভা কোন আদালতকে হাইকোর্টের পর্যায়ে উন্নত করতে পারে। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে হাইকোর্ট স্থাপন করতে বা রাজ্যের যেকোনো অংশে হাইকোর্টের একটি শাখা খুলতে পারে।

সংবিধান সংশোধন ক্ষমতা→ ভারতের পার্লামেন্ট সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে বিপুল ক্ষমতার অধিকারী। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির অনুমোদন লাগলেও অনেক ক্ষেত্রেয় পার্লামেন্ট সংবিধান সংশোধন করতে সক্ষম।

 নির্বাচন সংক্রান্ত ক্ষমতা→ পার্লামেন্টের সদস্য গণ রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি কে নির্বাচন করেন। পার্লামেন্ট তাদের পদচ্যুত করতে পারে। সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তার বিচার করে পার্লামেন্টে। বিচারপতি, নির্বাচনিয় অফিসার প্রমূখ উচ্চ পদাধিকারী ব্যক্তিত্বের পদচ্যুত‍্যের ব্যাপারে পার্লামেন্ট প্রস্তাব পাস করতে পারেন।

 তথ্য সরবরাহ→ ভারতের লোকসভা একটি বিতরকিত মঞ্চ। বিশ্বের যাবতীয় তথ্য খবরা-খবর পার্লামেন্টের নিজেও নিজের তথ্য সরবরাহ করেন। এই তথ‍্যাদির মাধ্যমে জনগণ সরকারি কার্যকলাপ সম্বন্ধে অবহিত হতে পারে।

মূল্যায়ন→ ভারতে ইংল্যান্ডের অনুকরণে সুস্পষ্টভাবে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে প্রধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় প্রকৃত ক্ষমতা ও কর্তিত লোকসভার হাতে থাকে, কারণ এই সভায় প্রতিনিধিরা জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত। ভারতের লোকসভা ভারতীয় গণতন্ত্রের, জনগণের আশা আকাঙ্খার মূর্ত প্রতীক।